পরমাণু শক্তি কমিশনকে দুর্বল করার অভিযোগ ! আটকে দেওয়া হচ্ছে স্কলারশিপ ও বেতন
বাংলাদেশের একটি অতি সংবেদনশীল গবেষণা প্রতিষ্ঠান হিসেবে পরিচিত পরমাণু শক্তি কমিশন বর্তমানে চরম সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। বিজ্ঞানীদের বিদেশি স্কলারশিপে অংশগ্রহণে বাধা, কর্মশালায় অংশগ্রহণের সুযোগ না দেওয়া, এমনকি মাসের পর মাস বেতন বন্ধ রাখার মতো ঘটনাও ঘটছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
পরমাণু শক্তি কমিশনের একজন শীর্ষস্থানীয় ভূতত্ত্ববিদ ড. মনিরুজ্জামান সুমন সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্র সরকারের সম্মানজনক ‘ফুলব্রাইট ভিজিটিং স্কলার প্রোগ্রাম’-এ নির্বাচিত হলেও বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় তার অনুমতি আটকে দেয়। অভিযোগ রয়েছে, এমনকি তার সরকারি আদেশ (জিও) বাতিল করতে আদালতের শরণাপন্ন হয়েছে মন্ত্রণালয়। একই ধরনের ঘটনা ঘটেছে বিজ্ঞানী সাইফুর রহমানের ক্ষেত্রেও, যিনি জাপানের একটি মর্যাদাপূর্ণ স্কলারশিপে মনোনীত হয়েছিলেন।
এদিকে, গবেষণা বা প্রযুক্তি সংক্রান্ত আন্তর্জাতিক সম্মেলন বা প্রশিক্ষণে বিজ্ঞানীদের না পাঠিয়ে সেই সুযোগ নিচ্ছেন সচিবালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। জানা গেছে, সম্প্রতি আমেরিকা, অস্ট্রিয়া, কোরিয়াসহ কয়েকটি দেশে অনুষ্ঠিত ১৪টি আন্তর্জাতিক কর্মশালায় বিজ্ঞানীদের পরিবর্তে পাঠানো হয়েছে মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের—যার মধ্যে একজন বিজ্ঞানীর নামও নেই।
পরমাণু শক্তি কমিশনের সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এসব ঘটনা কেবল প্রশাসনিক উদাসীনতা নয়, বরং একটি গভীর ষড়যন্ত্রের অংশ। তাদের মতে, রূপপুর পারমাণবিক প্রকল্পে ঘটে যাওয়া অনিয়ম-দুর্নীতি যেন প্রকাশ না পায়, সে জন্যেই প্রকৃত বিজ্ঞানীদের সরিয়ে রাখার চেষ্টা চলছে।
অভিযোগ রয়েছে, কমিশনের অধীনে থাকা প্রকল্পগুলোতে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে আসল মালিকানা প্রতিষ্ঠান পরমাণু শক্তি কমিশনকে উপেক্ষা করে রাশিয়ান ও ভারতীয় অংশীদারদের অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে। তদুপরি, বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর সাথে করা চুক্তির স্বচ্ছতা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে।
সবচেয়ে উদ্বেগজনক বিষয় হলো, দুই মাস ধরে ৬০০ বিজ্ঞানীসহ প্রায় ২,৫০০ কর্মকর্তা-কর্মচারী তাদের নিয়মিত বেতন পাননি। এটি যে শুধু প্রশাসনিক ব্যর্থতা নয়, বরং পরিকল্পিত অপমানের বহিঃপ্রকাশ—এমনটাই মনে করছেন অনেকেই। তুলনা করে বলা হচ্ছে, ভারতের পরমাণু গবেষণা খাতে ৩৫ হাজার কোটি টাকার বাজেট থাকলেও, বাংলাদেশে এর পরিমাণ মাত্র ৩৬০ কোটি, যার সিংহভাগই অনিশ্চিত।
ভুক্তভোগী ড. মনিরুজ্জামান বলেন, “আমার স্কলারশিপ অনুমোদনের বিষয়টি মন্ত্রণালয়ের উচ্চ পর্যায় অবহিত ছিল। এমনকি উপদেষ্টা পর্যায়ের কর্মকর্তারাও পক্ষে ছিলেন। তবু মন্ত্রণালয় আদালতের মাধ্যমে বাধা সৃষ্টি করেছে। এটি শুধু আমাকেই নয়, দেশের গবেষণাক্ষেত্রকেই হুমকির মুখে ঠেলে দিয়েছে।”
পরমাণু বিজ্ঞানী সঙ্ঘের সভাপতি ড. এ এস এম সাইফুল্লাহ জানান, “আমরা রাস্তা দখল করে আন্দোলন করতে পারি না, কিন্তু খুব শিগগিরই নিয়ম মেনে প্রধান উপদেষ্টার কাছে একটি স্মারকলিপি জমা দেবো।”
এই পরিস্থিতিতে সরকারের কাছে সংশ্লিষ্ট মহলের প্রশ্ন—যদি পরমাণু শক্তি খাতে কাজ চালিয়ে যাওয়া সরকারের নীতি না হয়, তবে খোলাখুলি তা ঘোষণা করা হোক। কিন্তু দেশের মেধাবী বিজ্ঞানীদের এমন অবমাননা কোনোভাবেই কাম্য নয়।